বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে কেবল পড়াশোনার যোগ্যতা থাকলেই যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি পরিকল্পিত প্রস্তুতি, নথিপত্রের সঠিকতা, ভাষা দক্ষতা ও বাজেট ব্যবস্থাপনাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগে থেকে ধাপে ধাপে প্রস্তুতি নিলে ভর্তি ও ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হয়। নথিপত্র ও আনুষ্ঠানিকতা প্রথমেই সার্টিফিকেটের নাম সঠিক আছে কি না তা যাচাই করতে হবে। বানান বা তথ্যের অমিল থাকলে দ্রুত সংশোধন জরুরি। জন্মসনদ, এনআইডি ও সার্টিফিকেটের নাম যেন অভিন্ন হয়। একইভাবে পাসপোর্টে নাম, জন্মতারিখ ও ঠিকানা সার্টিফিকেটের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে কি না সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। স্নাতক পর্যায়ে পড়তে চাইলে এসএসসি-এইচএসসির নম্বরপত্র ও সনদ এবং স্নাতকোত্তরে পড়তে চাইলে অনার্স সার্টিফিকেট অবশ্যই সংগ্রহে রাখতে হবে। এসব সনদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন করতে হবে। ভাষা ও ভর্তি পরীক্ষা ভাষাজ্ঞান প্রমাণে আইইএলটিএস, টোফেল বা পিটিই পরীক্ষার প্রস্তুতি আগে থেকেই শুরু করা উচিত। কাঙ্ক্ষিত স্কোর তুলতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে, ফলে সেশন মিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া স্নাতক স্তরে SAT/ACT এবং স্নাতকোত্তরে GRE/GMAT পরীক্ষার প্রস্তুতিও আগে থেকে নেওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে যদি স্কলারশিপ পেতে চান। বিশ্ববিদ্যালয় ও আবেদন প্রক্রিয়া বিদেশে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সুপারিশপত্র (Recommendation Letter) এবং স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আগে থেকেই ২-৩ জন শিক্ষকের কাছ থেকে সুপারিশপত্র সংগ্রহ করতে হবে। পাশাপাশি কেন ওই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় বেছে নিচ্ছেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী—এসব বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে SOP প্রস্তুত করতে হবে।নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড অনুযায়ী অন্তত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আগে থেকে তালিকাভুক্ত করা ভালো। পছন্দ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের সময়সীমা ক্যালেন্ডারে নোট করে রাখতে হবে এবং সময়মতো আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। আর্থিক পরিকল্পনা শিক্ষাবৃত্তি ছাড়া বিদেশে পড়াশোনা অনেক ব্যয়বহুল। টিউশন ফি, ভিসা ফি, বিমানভাড়া, ব্লক মানি, আবাসন ও দৈনন্দিন খরচ মিলিয়ে একটি পূর্ণ বাজেট আগে থেকেই প্রণয়ন করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাজেট পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত না হলে বিদেশে গিয়ে বিপাকে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ব্যক্তিগত দক্ষতা ও অভ্যাস শুধু একাডেমিক প্রস্তুতি নয়, বরং ব্যক্তিগত কিছু দক্ষতাও বিদেশে টিকে থাকতে সহায়ক। ভলান্টিয়ার অভিজ্ঞতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও স্কলারশিপের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেয়। রান্নার মৌলিক দক্ষতা আগে থেকে রপ্ত করলে বিদেশে জীবন সহজ হয়। ড্রাইভিং শেখা ও আন্তর্জাতিক লাইসেন্স সংগ্রহ করলে বিদেশে যাতায়াত সুবিধাজনক হয়। মাইক্রোসফট অফিস, ইমেইল ব্যবহারসহ কম্পিউটার স্কিলও বিদেশে পড়াশোনার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে একাডেমিক যোগ্যতা যতটা জরুরি, পরিকল্পিত প্রস্তুতি তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগে থেকেই নথিপত্রের সঠিকতা নিশ্চিত করা, ভাষা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া, বাজেট প্রণয়ন করা ও ব্যক্তিগত দক্ষতা অর্জন করলে ভর্তি ও ভিসা প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়। ফলে নতুন পরিবেশে পড়াশোনাও হয়ে ওঠে নির্ভার ও সফল।