উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন অনেক শিক্ষার্থীর। মানসম্মত শিক্ষা, আধুনিক গবেষণার সুযোগ ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির টানে প্রতিবছরই আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকছেন হাজারো শিক্ষার্থী। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা QS (Quacquarelli Symonds) প্রকাশিত ২০২৬ সালের র্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলকে বিশ্বের সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছর এই তালিকার শীর্ষে ছিল লন্ডন।
কেন সিউল শীর্ষে?
শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের সুযোগ, সাশ্রয়ী খরচ, আধুনিক নগরজীবন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সিউলকে শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।
- চাকরির সম্ভাবনা: সিউল বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি ও ব্যবসাকেন্দ্র। স্যামসাং, এলজি, হুন্দাইসহ শীর্ষ কোম্পানিগুলোর প্রধান কার্যালয় এখানে অবস্থিত। গ্যাংনাম ও ডিজিটাল মিডিয়া সিটির মতো এলাকাগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য আইটি ও স্টার্টআপ খাতে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়।
- পড়াশোনার খরচ: QS-এর তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বার্ষিক গড় টিউশন ফি প্রায় ৬,৩০০ মার্কিন ডলার। তুলনামূলকভাবে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক শহরের চেয়ে কম। জীবনযাত্রার খরচ জীবনধারার ওপর নির্ভর করলেও ছাত্রাবাস ও খণ্ডকালীন কাজ খরচ সামলানো সহজ করে।
- ২৪ ঘণ্টার শহর: সিউলকে বলা হয় “Never Sleep City”। লাইব্রেরি, খাবারের বাজার, কে-পপ কনসার্ট ও বিনোদনকেন্দ্র—যে কোনো সময়ই শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
- সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা: আধুনিক নগরায়নের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদ, বৌদ্ধ মন্দির ও কোরিয়ান সংস্কৃতি শিক্ষার্থীদের ভিন্নতর জীবনধারা উপহার দেয়।
সিউলের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (QS বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং অনুযায়ী)
- Seoul National University (SNU)
- Yonsei University
- Korea University
- Sungkyunkwan University (SKKU)
- Hanyang University
- Kyung Hee University
- Sejong University
- Chung-Ang University
- Ewha Womans University
- Sogang University
- Dongguk University
- Konkuk University
- Hankuk University of Foreign Studies (HUFS)
- University of Seoul
আবেদন প্রক্রিয়া
পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রোগ্রাম, যোগ্যতা ও টিউশন ফি সম্পর্কে তথ্য জেনে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, পাসপোর্ট ও ভাষাজ্ঞান (IELTS বা TOPIK) সনদপত্র জমা দিতে হয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে বা সরাসরি সাক্ষাৎকার নেয়। ভর্তির অফার পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসে গিয়ে D-2 স্টুডেন্ট ভিসা করতে হয়। এরপর ডরমিটরি বা অ্যাপার্টমেন্টে থাকার ব্যবস্থা ও আর্থিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করলেই যাত্রা সম্ভব।
অতিরিক্ত সুবিধা
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ ও ফান্ডিং সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বছরে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খণ্ডকালীন কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। নিরাপদ পরিবেশ, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও বৈশ্বিক নেটওয়ার্কিং সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ তৈরি করেছে।
শেষকথা
বিশ্বমানের শিক্ষা, প্রাণবন্ত নগরজীবন, সাশ্রয়ী খরচ ও চাকরির সুযোগ মিলিয়ে সিউল এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। যারা পড়াশোনার পাশাপাশি বৈশ্বিক ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের কাছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী হতে পারে সেরা পছন্দ।